পাকিস্তান ফেরত শরণার্থীদের জন্য শত শত শিবির স্থাপন করেছে ইমারতে ইসলামিয়া

6 months ago
156

গত ১১ দিনে পাকিস্তান সরকার জোরপূর্বক প্রায় ৪০ হাজার আফগান নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাকিস্তান থেকে আফগান নাগরিকদের বিতাড়নের হার আরও বেড়েছে।

১৫ এপ্রিল কিছু আফগান গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যায়, গত ১১ দিনে প্রায় ৭,০০০ পরিবার তোরখাম সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে, যাদের মধ্যে নথিপত্রবিহীন পরিবার, জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো ব্যক্তি এবং অন্য অভিবাসীরাও রয়েছেন।

ফেরত আসা আফগান নাগরিকরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পুলিশ তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে, বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করেছে এবং অভিযানের সময় নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এছাড়াও, পাকিস্তানি চালকরা সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

পাকিস্তান থেকে ফেরত আসা মুহাম্মদ ইহসান বলেন, 'প্রথমবার যখন আমাকে গ্রেপ্তার করল, তখন তারা আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিল। তিনদিন পর আমাকে ছেড়ে দিলেও পরে আবার বাজারে গেলে পুনরায় গ্রেপ্তার করে আরেকবার ২০ হাজার টাকা নেয়।'

আরেক ভুক্তভোগী বখতিয়ার বলেন, 'আমাদের কোনো উপায় ছিল না। প্রচণ্ড চাপ ও নির্মম আচরণের মুখে পড়ে আমরা দেশে ফিরতে বাধ্য হই। তোরখামে পৌঁছে যেই পরিস্থিতি দেখলাম, সেটাই আমাদের জন্য স্বস্তির ছিল, কারণ পাকিস্তানে যা সহ্য করেছি, তা অবর্ণনীয়। সীমান্তে ফর্ম জারি করতেও ২০ থেকে ৩০ হাজার রুপি দাবি করেছে তারা।'

৪৫ বছর আগে পাকিস্তানে পাড়ি জমানো কুনার প্রদেশের ৫৮ বছর বয়সী দাদ মুহাম্মদ বলেন, 'ঘরবাড়ি, বাইক, পণ্যবাহী গাড়ি—সব ফেলে আসতে হয়েছে। পাকিস্তানি পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আমাদের কিছু নিতে পর্যন্ত দেয়নি, কেবল সন্তানদের গাড়িতে তুলে নিয়ে পালিয়ে এসেছি।'

আরেক ফেরতপ্রাপ্ত সানাউল্লাহ বলেন, 'তারা মাত্র তিন দিনের নোটিশে আমাদের দেশ ছাড়তে বলে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের জিনিসপত্র বিক্রি বা প্রস্তুতি নিতে পারিনি। সবই পেছনে রেখে আসতে হয়েছে।'

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের ধারাবাহিক এই গণবহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও অভিবাসন নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই তৎপরতা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতার ওপর একটি কৌশলগত চাপ তৈরির প্রচেষ্টা। হঠাৎ করে হাজার হাজার আফগান নাগরিকের ফেরত আসা পুনর্বাসন, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা খাতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে, যা ইমারতে ইসলামিয়ার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তবে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইমারতে ইসলামিয়া কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রশাসনিক উপপ্রধান আব্দুস সালাম হানাফি নানগারহার ও কুনার প্রদেশ সফর করেন এবং পাকিস্তান ফেরত অভিবাসীদের জন্য জমি বিতরণ কার্যক্রমের সূচনা করেন। এতে করে অভিবাসীদের পুনঃস্থাপনের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হয়েছে।

এছাড়াও, শরণার্থীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা নিশ্চিত করতে তোরখাম সীমান্ত ও আশপাশের অঞ্চলে শত শত অস্থায়ী শিবির স্থাপন করেছে ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। এইসব শিবিরে আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও পরিবহনসহ জরুরি মানবিক সেবা প্রদানে সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে প্রতিটি শরণার্থী নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সহায়তা পায়।

ভিডিও ক্রেডিটঃ BAKHTAR News Agency

Loading comments...