ll কলকাতার এই মন্দির লাইট হাউস হিসেবে কাজে লাগতো জানেন কি? / কোথায় এই মন্দির আর এর ইতিহাসই বা কী?

8 months ago
1

'বনমালী সরকারের বাড়ি,
গোবিন্দরামের ছড়ি!
ঊর্মিচাঁদের দাড়ি,
হুজুরীমলের কড়ি ।।'

জনপ্রিয় এই তরজা গানে কলকাতার চার বিখ্যাত ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। জানেন কি, এদের মধ্যে কালো জমিদার কে ছিলেন আর তাঁর নির্মিত পঞ্চরত্ন মন্দির যা ইংরেজ মহলে বিখ্যাত ছিল 'ব্ল্যাক প্যাগোডা' বলে? জানেন কি, এই মন্দির শহীদ মিনারের থেকেও উঁচু ছিল? আসুন, আজ আপনাদের নিয়ে যাব ইতিহাসের সেই পুরোনো পৃষ্ঠায় যা কালের কীট দংশনে অনেকটাই ম্লান বাঙালির মনন মন্দিরে।

হাই ফ্রেন্ডস, আমি প্রিয়াঙ্কা আজ আপনাদের জন্য নতুন ভিডিও নিয়ে উপস্থিত আমার আপনার প্রিয় চ্যানেল 'ট্রাভেল উইথ স্বপ্নসায়র' নিয়ে। আজ আমরা এসেছি উত্তর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র শ্যামবাজারের অনতিদূরে বাগবাজার আর শোভাবাজারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। 1730 খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মন্দির প্রথমে পঞ্চরত্ন, পরে নতুন ভাবে নির্মিত নবরত্ন মন্দিরটি 'কালো জমিদার' গোবিন্দরাম মিত্রের গৃহদেবতা শিবের মন্দির! মন্দিরটির উচ্চতা ছিল চূড়া পর্যন্ত 165 ফুট যা শহীদ মিনারের থেকেও বেশি, কেননা শহীদ মিনারের উচ্চতা 158 ফুট। সেই সময় এত বড় মন্দির বাঙালি সমাজ দেখে নি। কথিত আছে, সে সময়ে নাবিকেরা মন্দিরের চূড়াকে দিক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে। ইংরেজরা মন্দিরটিকে 'ব্ল্যাক প্যাগোডা' বলে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু 1737 খ্রিস্টাব্দের 11 ই অক্টোবর প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্প বাংলার 3000 মানুষের প্রাণ হরণের সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দিরেরও বিশাল ক্ষতিসাধন করে,যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে পড়ে।

আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কে এই গোবিন্দরাম মিত্র আর 'কালো জমিদার'ই বা কী! তাহলে আপনাদের পৌঁছাতে হবে আজ থেকে প্রায় তিনশ বছর পিছনে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের থেকে তিনটি গ্রাম গোবিন্দপুর, সুতানুটি আর কলিকাতার জমিদারির স্বত্ত্ব কিনে নেওয়ার পর মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে। একদিকে গড়ে ওঠে 'হোয়াইট টাউন' যেখানে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। আর অন্যদিকে 'ব্ল্যাক টাউন' যেখানে বসবাস গড়ে ওঠে এদেশীয়দের। রাজস্ব আদায়ের জন্য গড়ে তোলা হয় 'কাউন্সিল' যার মধ্যে ছিল প্রেসিডেন্ট, হিসাব রক্ষক, গুদাম রক্ষক, ও খাজনা আদায়কারী। 1720 খ্রিস্টাব্দে এই কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে যুক্ত হল জেনারেল বা জমিদার। আর তার অধীনে নিযুক্ত হল ডেপুটি জেনারেল, যাঁর প্রধান কাজই হল রাজস্ব আদায় করা। এই কাজ করার জন্য এদেশীয়দের থেকেই নিযুক্ত করা হত বলে এঁদের 'কালো জমিদার' বলা হত। এই পদে গোবিন্দরাম মিত্রকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি হলেন কুমোরটুলীর মিত্র বংশের পূর্বপুরুষ। আদি বাসস্থান ব্যারাকপুর হলেও সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে কুমোরটুলিতে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর প্রতিপত্তির দৃষ্টান্ত ইতিহাসে পাওয়া যায়। 1742 সালে বাংলায় বর্গী আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ' মারাঠা ডিচ' নির্মাণের সময় তাঁর বাগানবাড়ি রক্ষা করার জন্য ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, সিরাজের কলকাতা আক্রমণের সময় নবাব নিজে তাঁর বাড়িতে পাহারা বসিয়েছিলেন যাতে কেউ ধন সম্পদ কেউ লুট করতে না পারে।

এবার আসি মন্দিরের কথায়। মন্দিরের গঠন ' রত্ন'প্রকৃতির হলেও মন্দিরের সামনে চালামন্দির ও জোড়বাংলার বৈশিষ্ট্যও পাওয়া যায়। এসবের হদিশ পাই আমরা কেবল হাতে আঁকা চিত্রে। 1787 খ্রিস্টাব্দে থমাস ড্যানিয়েলের আঁকা ' হিন্দু প্যাগোডা অ্যান্ড হাউস', 1826 খ্রিস্টাব্দে জেমস বেইলি ফ্রেশারের আঁকা ' এ ভিউ অফ ব্ল্যাক প্যাগোডা' , 1829 খ্রিস্টাব্দে থমাস প্রিন্সেপের আঁকা ' চিৎপোর রোড অ্যান্ড ব্ল্যাক প্যাগোডা' ,এবং সর্বশেষ আঁকা 1882 সালে স্যার চার্লস ডিওয়েল -এর 'হিন্দু মাট ইন চিতপুর বাজার' ! এই চিত্রগুলোতে মন্দিরটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ধরা পড়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের গঠন বারংবার পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি মন্দিরের পুরোনো গঠন আবারও পরিবর্তন হয়েছে, যাতে আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট।

কুমোরটুলির বনমালী সরকার স্ট্রিটের প্রবেশের ঠিক আগেই বাগবাজার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের ঠিক বিপরীতেই এই মন্দিরের অবস্থান।

কীভাবে যাবেন ―
১) বাসে যেতে চাইলে: - ধর্মতলা থেকে বাস নং 43 (ধর্মতলা - দক্ষিনেশ্বর) । নামতে হবে কুমোরটুলি বা সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দির। হাওড়া থেকে 215 এ (হাওড়া -সল্টলেক) ধরে নামতে হবে শোভাবাজার। সেখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটা পথ।
2) মেট্রোতে যেতে চাইলে :- যে কোন মেট্রো স্টেশন থেকে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে 10 মিনিট হাঁটা পথ।
3) ট্রেনে যেতে চাইলে :-চক্ররেলে বাগবাজার বা আহিরিটোলা শোভাবাজার স্টেশনে নেমে 10 থেকে 15 মিনিটের হাঁটা পথ।

মন্দির দর্শনের জন্য সারাদিন খোলা থাকে। আপনি যে কোনো সময়ে দর্শন করতে পারেন।

তাহলে আজ এই পর্যন্তই। আবার নতুন ভিডিও নিয়ে শিগগিরই আসছি। টাটা।

#travelvlog #weekendtripfromkolkata #bagbazar #weekendtrip #onedaytrip #viral #কলকাতা #বাগবাজার #onedayouting #blackpagoda #শোভাবাজার #কালো_জমিদারের_মন্দিরের_ইতিহাস #গোবিন্দরাম_মিত্র #শহীদ_মিনার #কলকাতার_পুরোনো_ইতিহাস

Loading comments...