🌺 *আদ্যাপীঠ মন্দির* 🌺 || Adyapith Kali Temple, Dakshineswar West Bengal ||

🌺🌺🌺 *আদ্যাপীঠ মন্দির* 🌺🌺🌺

তখনও শহর কলকাতা গড়ে ওঠেনি। তবুও কালীক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল হুগলী নদীর তীরের এই জনপদ। সময়ের গতিতে ক্ষূদ্র জনপদ আজ মহানগরী। সেই ব্যস্ত শহরের ভিড়ের মাঝেও আজও অমলিন কালীমাহাত্ম্য।

উত্তর কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সব কালীমন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস, বহু জনশ্রূতি।

কলকাতার উত্তর প্রান্তে শক্তি আরাধনার অন্যতম পীঠস্থান হল আদ্যাপীঠের মন্দির।

আদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা ঠাকুর মহাশয়ের হাসপাতাল গড়ে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এক দিন স্বপ্নে রামকৃষ্ণদেব বলেন যে, ইডেন গার্ডেনের মজা জলাশয় থেকে মাতৃমূর্তি তুলে এনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। তার পরই স্বপ্নাদেশ মেনে ইডেন জলাশয়ে ডুব দিয়েই তুলে আনেন কালীরত্নধন আদ্যামূর্তি, সেই মূর্তি তুলে এনে প্রতিষ্ঠা হয় আদ্যাপীঠ মন্দিরের।

মানুষকে প্রেম ও আদর্শে দীক্ষিত করতে ১৩৪০ বঙ্গাব্দে শুরু হয়ে, ১৩৭৫ সনের মকর সংক্রান্তিতে শেষ হয় শ্রী অন্নদা ঠাকুরের স্বপ্নে দেখা মন্দিরের নির্মাণ কার্য। তিন চুড়োওয়ালা তিন ধাপের মন্দির, প্রথম ধাপে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মূর্তি, মাঝের ধাপে আদ্যামা এবং সব চেয়ে উপরের ধাপে রাধাকৃষ্ণ। তবে মূল মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ।

*আদ্যাপীঠ এর ইতিহাস, জনশ্রুতি অনুযায়ী।*

দক্ষিণেশ্বর লাগোয়া এই বিখ্যাত কালী মন্দির নিয়ে রয়েছে এক অদ্ভুত ইতিহাস। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় কবিরাজি পড়তে এসে ছিলেন অন্নদা ঠাকুর মহাশয়। কবিরাজি পাশ করার পর অণুশিলন করবেন বলে ঠিক করেন। ঠিক এমনই সময় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলেন তোমার কবিরাজি ব্যবসা হবে না বাপু !!! অন্নদা ঠাকুরকে নির্দেশ দেন ইডেন গার্ডেন্সের ঝিলে আদ্যা মা পড়ে আছেন। যাও ওখান থেকে মাকে উঠিয়ে নিয়ে এসে মাকে প্রতিষ্ঠা করো।

অন্নদা ঠাকুর জলাশয়ে ডুব দিয়ে নিয়ে আসেন এক ১৮ ইঞ্চির আদ্যা মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি।

সেদিন ছিল রামনবমী তিথি। রাতে মা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, অন্নদা কাল বিজয়া দশমী। তুমি আমায় গঙ্গায় বিসর্জন দিও। এই কথা শুনে অন্নদা ঠাকুর আঁতকে উঠে বলেন, আমি কি পুজোপাঠ করিনি বলে তুমি রাগ করে চলে যেতে চাইছ ?

মা তখন বলেন, না, তা নয়! আমি শুধু শাস্ত্র বিহিত মতে পুজো পেতে চাই না। মা খেয়ে নাও, মা পরে নাও, এমন সহজ সরল ভাষায় যে ভক্ত নিজের দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তু আমাকে নিবেদন করবে, সেটাই হবে আমার আসল পুজো। যদি কোনও ভক্ত আমার সামনে আদ্যাস্তোত্র পাঠ করে তাহলে আমি বিশেষ আনন্দিত হব। এরপর মা আদ্যাস্তোস্ত্র বলেন, আর অন্নদা ঠাকুর তা লিখতে থাকেন। সেই স্ত্রোত্রই আদ্যাপীঠে পাঠ হয়, যা আদ্যাস্ত্রোত্র নামে আমাদের কাছে জনপ্রিয়।

এই ঘটনার বছর চারেক পর ১৯১৮ সালে ঝুলন পূর্ণিমার রাতে রামকৃষ্ণদেব অন্নদা ঠাকুরকে হৃষিকেষ যেতে বলেন এবং সেখানে মন্দির তৈরির আদেশ দেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন সৃষ্টির পর পৃথিবীর বুকে এমন মন্দির সৃষ্টি হতে চলেছে যেখানে ঈশ্বরের প্রকট আবির্ভাব ঘটবে। তার মাহাত্ম্য এতটাই হবে যে মন্দির স্পর্শ করলেই ভক্তদের উদ্ধার মিলবে।

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য অন্নদা ঠাকুরের হাত ধরেই দক্ষিণেশ্বরের অদূরেই তৈরি হয় এই আদ্যাপীঠ মন্দির।

এটি কোনও শক্তি পীঠ নয়। আদ্যা মায়ের বিগ্রহে ফুল-চন্দন পড়ে নিয়মিত। ভোগও হয়। তবে অন্য দিনের থেকে একটু আলাদা আয়োজন হয় কালীপুজোর সময়। সেদিন মহাপুজোর আয়োজন হয় আদ্যা পীঠ মন্দিরে। আলোয় সেজে ওঠে গোটা আদ্যাপীঠ মন্দির।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, কথা ছিল... বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে হবে তাহলেই মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ অবাধ থাকবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। তাই নাট মন্দির থেকেই দর্শন করতে হয় আদ্যামাকে। শীর্ষে রাধাকৃষ্ণ, তারপর আদ্যামা এবং দেবীর নীচে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। এভাবেই সাজানো মূল মন্দিটি।

ভোগেও রয়েছে বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য। রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে বত্রিশ সের চালের রান্না হয়। দেবীর জন্য সাড়ে বাইশ সের চালএর রান্না হয়। এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্য সাড়ে বারো সের চালের রান্না হয়। এ ব্যবস্থা প্রতিদিনের জন্য। মূল মন্দিরের নির্মাণেও বৈচিত্র্যের ছোঁয়া রয়েছে। মন্দিরের চূড়ায় সর্ব ধর্মের প্রতীক ব্যবহৃত আছে, আছে হিন্দু ধর্মের ত্রিশুল, বৌদ্ধ ধর্মের পাখা, খ্রীষ্ট ধর্মের ক্রুশ এবং ইসলাম ধর্মের চাঁদ ও তারা। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এমন ভাবনা স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী !!!

প্রচলিত আছে প্রতিদিন যদি আদ্যাস্তোস্ত্র পাঠ করা যায় তবেই জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব হবে৷

তবে বলে রাখা ভালো আদ্যাপীঠে গেলে মায়ের দর্শন সব সময়ে পাওয়া যায়না৷

*পথনির্দেশ*
আপনারা যদি নিজস্ব গাড়ি বা বাইকে করে যান, অনুরোধ করবো গুগল ম্যাপ অন করে আপনারা পৌঁছাতে পারেন আদ্যা মায়ের মন্দিরে, আর যারা ট্রেনে আসবেন, হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে বালি স্টেশনে নেবে সেখান থেকে অটো বা টোটো করে পৌঁছাতে পারেন মায়ের মন্দিরে, আর যারা সিয়ালদহ থেকে আসবেন তারা ট্রেন এ চেপে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে নেবে অটো বা টোটো ধরে সোজা মায়ের মন্দিরে উপস্থিত হতে পারেন।

#tourwiththesanjibbiswas
#Tourwiththesanjibbiswas
#Adyapithtemple
#Adyapith_Mondir
#আদ্যাপীঠ_মন্দির
#আদ্যাপীঠের_ইতিহাস
#Offbeat_Tourist_Places_Near_Kolkata
#Weekend_Tour_From_Kolkata
#Weekend_Trip_From_Kolkata
#Offbeat_Destination_of_West_Bengal
#Oneday_Trip_From_Kolkata
#Addapith_Trip

ইউটিউব চ্যানেল লিংক :- https://www.youtube.com/tourwiththesanjibbiswas