ll কৌশিকী অমাবস্যাতে এই কয়টি বিধি পালন করলেই আপনি জীবনে উন্নতি লাভ করবেন ll নির্ঘন্ট ও ইতিহাস ll

2 years ago

#মোক্ষ #অজানা_তথ্য #কৌশিকীঅমাবস্যা

কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা, কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথিটি একটু বিশেষ। অনেক কঠিন ও গুপ্ত সাধনা এই দিনে করলে আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করে। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়৷ এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? আদ্যা শক্তি মহামায়াও মেনকা রানির গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না। তা হলে উপায়?

পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন, তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে 'কালী' বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।

তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন। ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী। আজ সেই তিথি, যে দিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয়া স্তরের অন্যতম দেবী তারা মর্ত ধামে আবির্ভূত হন। বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠে এই উপলক্ষে বিশাল উত্‍সব হয়৷

মা তারা হলেন দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা, তিনিই কৌশিকীর আরেক রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, এক সময় মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ট হয়েছিলেন। সেই সময় দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন৷ কিন্তু তাতেও চিরস্থায়ী শান্তি ফেরেনি। সাধনার মাধ্যমে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেছিলেন শুম্ভ-নিশুম্ভ। সাধনায় মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা বরও দিয়েছিলেন। সেই কাহিনীই আমরা মহালয়ার দিন ভোরে শুনি। ব্রহ্মার বরে বলিয়ান হয়ে অত্যাচার শুরু করে শুম্ভ- নিশুম্ভ, দুই অসুরের অত্যাচারে দেবতারা আবার অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এরপর সব দেবতারা মিলে দেবী পার্বতীর স্মরণাপন্ন হলে দেবতাদের রক্ষা করতে মা মহামায়া তাঁর ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করে, কোশ হতে এক দেবীমূর্তির জন্ম দেন। সেই দেবীই মা কৌশিকী। কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতেই কৌশিকী রূপে মা তারা শুম্ভ- নিশুম্ভকে দমন করেছিলেন। সেই থেকেই তিথিটির নাম হয় কৌশিকী অমাবস্যা।

কথিত আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা, ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ধ্যানমগ্ন বামাক্ষ্যাপা ওইদিনই তারা মায়ের দর্শন পান।

বাকিটা ভিডিওতে রইল!

Loading comments...