ll ভারতরত্ন প্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেষজীবনে বাড়িওয়ালার গলাধাক্কা খেয়েছিলেন, জানেন তিন

1 year ago
1

#স্পন্দন #অনুপ্রেরণা_মূলক_ভিডিও #গুলজারীলাল_নন্দ

জানেন কি ভারতরত্ন প্রাপ্ত এই প্রধানমন্ত্রী শেষ জীবনে বাড়িওয়ালার গলাধাক্কা খেয়েছিলেন!

সময়মতো বাড়িভাড়া না দিতে পারায় ৯৪ বছর বয়সের এক বৃদ্ধকে ঘাড়ধাক্কা মেরে বের করে দিচ্ছেন বাড়িওলা। বৃদ্ধের সম্বল কেবলমাত্র একটা ছেঁড়া মাদুর,পুরানো চাদর,এ্যলুমিনিয়ামের একটা বাসন,একটা পেয়ালা,প্লাষ্টিকের একটা বালতি আর একটা মগ।
বাড়িওলার কাছে কাকুতি মিনতি করে,আরোও কয়েকদিন সময় চেয়ে চলেছেন বৃদ্ধ।‌ প্রতিবেশীদের অনুরোধে কিছুটা নরম হলেন বাড়িওলা।‌ সময় দেওয়া হলো আরো পনেরো দিন।
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এক তরুণ সাংবাদিক লক্ষ্য করেন বিষয়টি। বিষয়টি খবর করতে হবে- এটা ভেবে বৃদ্ধের কয়েকটি ছবি, বাড়ীর ছবি তুলে নিলেন সাংবাদিক। মনে মনে ঠিক করে নিলেন হেডলাইন করা যাবে খবরটা। হেডলাইনটা হবে –
” টাকার জন্য এক অসহায় বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন- পাষাণ হৃদয়ের এক বাড়িওলা।”
দপ্তরে গিয়ে সাংবাদিক সম্পাদককে ঘটনাটি জানালেন। ছবিগুলো দেখে সম্পাদক অবাক!
সম্পাদক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেন–
“চোনো এই বৃদ্ধটি কে ?”
"না।”
পরেরদিন সকালে নিউজ পেপারে ছবি সহ প্রকাশিত হলো- “অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করে চলেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।”
কিন্তু তিনি ছিলেন নিরুপায়। তাঁর ইনকামের আর কোনো উৎস ছিলো না। বন্ধুদের অনুরোধে কিছুটা বাধ্য হয়েই গ্রহণ করেছিলেন সরকারি ভাতা। কিন্তু,সেটাও সময়মতো হাতে পেতেন না। দুই মাস ভাতা না আসার কারনে, বাকি রয়ে গেছে বাড়িভাড়া। ক'দিন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয়নি, টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ওষুধ খাওয়া।
খবর পৌঁছে গেলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওয়ের কাছে। অনেক মন্ত্রী-সান্ত্রী, আমলা সহ হাজির বড়ো এক কাফেলা, সেই ভাড়াবাড়িতে।
বাড়িওলা আশ্চর্যান্বিত ! কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। পরে তিনি জানতে পারলেন, ইনি হলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ........ ! সঙ্গে সঙ্গে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
বৃদ্ধ নিশ্চুপ। বললেন- “ঠিকই আছে, আপনার কোনো দোষ নেই। যেটা করা উচিত, আপনি সেটাই করেছেন।”

এক স্বাধীনতা সংগ্রামী, এক ভারতরত্ন, সর্বোপরি স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাও আবার একবার নয়, দু-দুবারের প্রধানমন্ত্রী ভদ্রলোক। বৃদ্ধ বয়সে এই লোককেই কিনা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করেছিলেন বাড়িওয়ালা।
তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, সরকার দিতে চেয়েছিল মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা। কিন্তু, তা প্রত্যাখ্যান করেন সবিনয়ে। পরিস্কার জানিয়ে দেন- “দেশের জন্য আত্মত্যাগ, টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবো না।”
বৃদ্ধকে সরকারি আবাসন, বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব জানানো হয়।
তিনি বলেন -“আর কদিন তো রয়েছি। এভাবেই জীবনটা কেটে যাক না !”
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়ে গেছেন, দুইবারের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব সামলে নেওয়া মানুষটা। যাবার সময় রেখে যান, ছেঁড়া মাদুর,পুরানো চাদর,থালা-বাটি, বালতি আর ফাটা মগ-টা।
১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই মহান মানুষটিকে ভারতরত্ন পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
মন্ত্রী, এমপি, এমএলএ- দের নাহয় বাদই দিলাম, আজকের দিনে যৎসামান্য শিক্ষায় শিক্ষিত একজন পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা পঞ্চায়েত প্রধানের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি! আবার একজন সাধারণ পৌরপ্রতিনিধি কিংবা সাধারণ পঞ্চায়েত সদস্যর সম্পত্তিও ন্যূনতম কয়েক লক্ষ্য টাকা! ভাবা যায়!!
রাজনীতির সংজ্ঞাটাই আজ বদলে গেছে, জনগণের সেবা এখন নাকি পেশা! এখানে বেতন আছে, ভাতা আছে, আছে আজীবন পেনশন। একাধিক জায়গায় নির্বাচিত হতে পারলে একাধিক পেনশন !
সাধারণ একজন নেতা, যিনি এই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাস, অর্থনৈতিক ইতিহাস কিছুই জানে না, অথচ এদের চারপাশে কত লোক! মিডিয়ার সামনে যে যত খারাপ কথা বলতে পারে, সে আজ ততো বড়ো নেতা। আর মিডিয়া সেটাই BEEAKING NEWS করে দেখায়, এতেই যে মিডিয়ার TRP বৃদ্ধি পায়!
সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এইসব নেতার প্রচুর অনুগামী। শুধু একবার নেতা হতে পারলেই কেল্লা ফতে, তিন পুরুষ আর কিছুই রোজগার করতে হবে না। কারণ রাজনীতিই যে ইনকামের সবচাইতে বড় উৎস।
কিন্তু, আমাদের দেশেই এমন বহু নেতা-মন্ত্রী ছিলেন, যাদের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অভাব-অনটন ছিলো নিত্যসঙ্গী। এরা দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা সারাজীবন ভেবে গেছেন। নিজেকে নিয়ে ভাবনার মতো অবকাশ এদের ছিলো না।
আজ যে ভদ্রলোককে নিয়ে আলোচনা হলো, তিনি ছিলেন একাধারে দেশের দুবারের প্রধানমন্ত্রী, একবারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সর্বোপরি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে Phd করা এবং ব্রিটিশ ভারতে বোম্বে সেন্ট্রাল কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। এবং অবশ্যই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে সামনে থেকে লড়াই করা একজন মানুষ।
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে (বর্তমান পাকিস্তানে) তাঁর জন্ম এবং ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারি ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। মহান এই মানুষটির নাম হলো শ্রী গুলজারিলাল নন্দ, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

Loading comments...