কালো জলে কুচলা তলে ll ঝুমুর গান ll ড্যান্স কভার প্রিয়াঙ্কা দত্ত ব্যানার্জি ll

2 years ago

#কালো_জলে_কুচলা_তলে #ঝুমুর_গান #প্রিয়াঙ্কা_দত্ত_ব্যানার্জি #ড্যান্স_কভার #kalo_jole_kuchla_tole #jhumur_gan #priyanka_dutta_banerjee #dance_covar

*কালঅ জলে কুইচল্যা তলে--*
( মূল লেখা শিক্ষক দূর্গাদাস মাহান্তি মহাশয়ের, আমি কিছুটা সংযোজন করেছি।)

(প্রথমেই বলে রাখি, এই গানটা এক প্রাচীন ঝুমৈর গান, ছোনাচে কৃষ্ণনাচের সময় গাওয়া হত বা এখনো কোনো কোনো দল গেয়ে থাকেন। মূল গানটা এত বড় ছিল না, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন লাইন(দু লাইনের 'ছুট ঝুমৈর') যুক্ত হয়ে বর্তমান রূপ নিয়েছে।)

যাঁরা ছৌনৃত্যের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন,মঞ্চে শ্রীকৃষ্ণের প্রবেশ ঘটলে কৃষ্ণসম্বন্ধীয় গান শুরু হয় - এটা সেই কৃষ্ণনাচে র গান ;শ্রীকৃষ্ণের পদচারণা, অঙ্গভঙ্গির কোমলতা ফুটে ওঠে শিল্পীর দক্ষতায়, বীররসের ছৌয়ে কোমল প্রেমের সুর বেজে ওঠে প্রেমিকপ্রবর কৃষ্ণের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ..
পুরুলিয়াতেই রচিত ,বহুল প্রচলিত গানটি , উচ্চারণের ত্রুটি বা সংগ্রাহকের অনবধানতায় উদ্ভট অর্থহীন কিছু শব্দ ঢুকেছে ; খুব ছোটবেলায় শুনেছি এটা একবার,তখন উত্তরা সিনেমা বানাতে বহু দেরি..

* কালঅ জলে কুইচল্যা তলে ডুবল্য সনাতন।
আজ সারাদিন কাল সারাদিন পাই না দরশন।।*

--সূর্যাস্তের পর তরল অন্ধকারে কালোজলে ভরা দীঘির পাড়ে , কুইচল্যা গাছের(কুইচল্যা জঙ্গলমহলের গাছ, বিষাক্ত ফল হয় , প্রতিটি গ্রামেই প্রায় আছে) নীচে ঘন অন্ধকারে অন্তর্হিত হলেন প্রেমিক সনাতন ; (গ্রাম্যপ্রেমের অন্যতম বহুল ব্যবহৃত স্থান হলো পুকুর পাড়ের গাছতলা )
---প্রেমিকা তারপর দুদিন (আজ সারাদিন কাল সারাদিন, সমস্ত জঙ্গলমহলে সারানা বলে কিছু নেই, আর মানভূমে চারানাও বলে না, চাইর আনা বলে, তাই চারানার অপভ্রংশ সারানা নয়) )চপল প্রেমিক সনাতনকে দেখতে পাননি।

*নদীর ধারে চাষে বঁধু মিছাই কর আশ।
ঝিরিঝিরি বাঁকা নদী বইছে বারঅ মাস।।*

---নদীর পাড়ে চাষে ভালো ফসলের আশা করা ভুল। সনাতনের মতিগতির মতই --কখন বন্যা এসে ডুবিয়ে যাবে, কখনো হাঁটুজল থাকবে... ঠিক নেই !

*ইঁচলি মাছের ভিতর ফরা তাই ঢাল্যেছি ঘি।
আমরা যদি নাই জানি ত তদের গেল কি।।*

---চিংড়ি মাছে ঘি ( মানভুঁইঞাতে ইঁচলি মাছ, যার ভেতর ফরা বা শূন্য )ঢালার মত বোকামি করে ফেলেছেন প্রেমিকা, নিজের অমূল্য মন নিজেই হারিয়েছেন, এখন পস্তানোর কিছু নেই।( অন্য কারো ভাবারও কিছু নেই।)

* চাঁচর চুইল্যা চাকমাদৈলা কুলহি কুলহি যায়।
দেখি শ্যামের বিবেচনা কার ঘরে সামহায়।।*

---চাঁচর চুইলা বা কুঞ্চিত কেশদামের কৃষ্ণবর্ণ, দোহারা চেহারার মানুষটি "কুলহি কুলহি" (গ্রামের রাস্তা) দিয়ে একা একা হেঁটে চলেন।উনি কার অন্তঃপুরে প্রবেশ করবেন তা ওনার নিজস্ব বিবেচনার ওপর নির্ভর করে..আর প্রেমিকা অভিমানী হয়ে সেটাই দেখবেন, সনাতন কার ঘরে যান।

*মেদিনীপুরের আয়না চিরুন বাঁকুড়ার ফিতা।
যতন কইরে বাঁধলি খঁপা তাও ত বাঁকা সিঁথা।।*

মেদিনীপুরের আয়না চিরুন, বাঁকুড়ার ফিতা দিয়ে কেশচর্চা করেছেন প্রেমিকা, তারপরও আনমনা প্রেমিকার মাথার সিঁথি বাঁকা হয়ে যায় কৃষ্ণের চিন্তায়।

* পেছপাড়িয়া রাজকুমারী গলায় চন্দ্রহার।
দিনে দিনে বাড়ছ্যে তুমার রূপের বাহার।।*

---পিছনপেড়ে শাড়ীতে( মূলতঃ গ্রামীন হাটে মেলে )রাজকুমারীর মতই লাগে কিশোরীকে, গলায় চন্দ্রহার( দামী স্বর্ণালঙ্কার নয়, হাটে পাওয়া অর্ধচন্দ্রাকৃতি শাঁখের লকেট, লাল তাগাতে বাঁধা থাকে) পরে আছেন, আর ঘন কেশদামের বাহার বর্ধিত হচ্ছে দিনদিন।

* যমুনাতে ফুল ফুট্যেছে নীল-কালঅ আর সাদা।
কন ফুলেতে কৃষ্ণ আছে, কন ফুলেতে রাধা।।*

--সনাতন এবং রাধা একসঙ্গে বসে থাকলে মনে হয় পুস্পিত বৃক্ষের দুই কলি, একটা কুঁড়ি নীলাভকৃষ্ণবর্নের সনাতন, আর একটা কুঁড়ি গৌরাঙ্গী রাধা পাশাপাশি..( নীলকালো আর সাদা)এত কাছাকাছি, কোনটা কৃষ্ণ, কোনটাই বা রাধা বোঝা দুস্কর।

কিছু পুরনো ছৌয়ের দল এখনো এই গানটা করে কৃষ্ণনাচের সময়।

Loading comments...