ll কলকাতার বুকেই দুর্গেশ্বর শিবমন্দির গেছেন কখনো? মা আনন্দময়ী কালী মন্দির দেখেছেন? ll বাড়ির পাশেই ll

2 years ago
1

'বাড়ির পাশেই' সিরিজের আজ পনেরো তম পর্ব। আজ আমাদের গন্তব্য 'দুর্গেশ্বর শিবমন্দির' ও 'মা আনন্দময়ী কালিমাতা' মন্দির। জানেন কি কলকাতার বুকেই এই সুপ্রাচীন মন্দিরে শিবকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আসুন জেনে নিই আসল কারণ।

তার আগে জেনে নিই মা আনন্দময়ী মায়ের সম্বন্ধে। আনন্দময়ী কালীমন্দির কলকাতার নিমতলা অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ কালীমন্দির। এটি নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ও স্ট্র্যান্ড রোডের সংযোগ স্থলে ৮৭, নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে অবস্থিত।

আনন্দময়ী কালী সম্বন্ধে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। জগন্নাথ নামে একজন লোক খড়ের ব্যবসা করতেন। জগন্নাথ কালী মন্দিরের মহন্তের ভক্ত ছিলেন। মৃত্যুর সময় মহন্ত ঠাকুর জগন্নাথের হাতে আনন্দময়ীর সেবার ভার দিয়ে যান। জগন্নাথের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই তিনি নারায়ণ মিশ্র নামে এক অবস্থাপন্ন ব্রাহ্মণকে এই কালীস্থান ও পার্শ্বস্থ জমি বিক্রি করে দেন। নারায়ণ বাবু ঘোর শাক্ত ছিলেন। তিনি দেবীর নিত্যপূজা ও সেবার ব্যবস্থা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে হরদেব মিশ্র মায়ের সেবায়েতের কাজ করেন। হরদেবের মৃত্যুর পর তাঁর ভাগ্নে নিমতলার জমিদার মাধবচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় উত্তরাধিকার সূত্রে এই মন্দিরের সেবায়েতের ভার পান। মাধবচন্দ্রের মৃত্যুর পর শিবকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় মায়ের সেবার ভার পান। সেই থেকে বন্দোপাধ্যায় পরিবার মন্দিরের সেবাকার্য পরিচালানা করে আসছেন।

বর্তমান মন্দিরটি একটি দোতলা দালান শ্রেণীর। গর্ভগৃহের সামনে চাঁদনি আকৃতির গাড়ি বারান্দা। প্রথমে আনন্দময়ী একটি পর্ণ কুটিরের মধ্যে থাকতেন। বন্দোপাধ্যায় পরিবার বর্তমান মন্দির নির্মাণ করে দেন।

মন্দিরের আদি বিগ্রহটি ছিল শ্মশানকালীর। সেটি ছিল মাটির মূর্তি। বত্তমান মূর্তিটি দক্ষিণাকালীর। এটি কষ্টিপাথরে তৈরী। মূর্তিটির উচ্চতা ৬০ সে.মি.। পঞ্চমুন্ডির আসনের উপর স্থাপিত রুপোর সিংহাসনে মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। মূর্তিটি সালঙ্কারা ও রক্তবস্ত্রপরিহিতা। বিগ্রহের মাথায় রয়েছে সোনার মুকুট। মায়ের জিবটিও সোনার তৈরি। মন্দিরে একটি শ্বেতপাথরের ফলক আছে। নিত্য পূজা ছাড়াও প্রতি অমাবস্যায় মন্দিরে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কালী পূজাতে মহা সমারোহে মায়ের পূজা হয়।

এবার, দুর্গেশ্বর শিবের ইতিকথা!
আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন?

ঐতিহাসিক মহানগরী কলকাতার ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে তার আনাচে-কানাচে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে বেশ রহস্যময় কিছু বিষয় আমাদের চোখের সামনে এসে ধরা দেবে। সেইরকমই একটি রহস্যময় জায়গা হল নিমতলা স্ট্রিট এলাকা। এখানে ১৬ নম্বর মহম্মদ রমজান লেনে অবস্থিত বহু পুরনো বুড়ো শিব মন্দির বা মোটা শিব মন্দির দর্শনার্থীদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা। প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা, ২৪ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট চওড়া এই সুবিশাল প্রাচীন ভাঙাচোরা মন্দিরটি বাংলার আটচালা মন্দিরের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মন্দিরের মাথা থেকে গা পর্যন্ত নেমে এসেছে বটের ঝুরি, যা দেখতে অনেকটা শিবের জটার মত।

আটচালা এই বৃহত্তর মন্দিরের ভাস্কর্যের রূপকার ছিলেন শ্রী গদাধর দাস । মন্দিরের ভিতরে রয়েছে কালো পাথরের তৈরি প্রায় ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি শিবলিঙ্গ, যার পোশাকি নাম দুর্গেশ্বর শিব। তবে এই শিবলিঙ্গের আকার দেখে ভক্তরা এনাকে মোটা শিব নামে সম্বোধন করেন। বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠানে শিবলিঙ্গে জল ঢালার জন্য পাশে রয়েছে একটি বড় লোহার সিঁড়ি।

শিব মন্দিরের ইতিহাস ও প্রাচীন রহস্য উন্মোচন:-
ব্রিটিশ শাসিত কলকাতার অন্যতম গণ্যমান্য ব্যক্তি হাটখোলার দত্ত পরিবারের মদনমোহন দত্তের দুই পুত্র রসিকলাল দত্ত এবং জহরলাল দত্ত আনুমানিক ১৭৯৪ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিশতাধিক বছরের পুরনো এই ভগ্নপ্রায় আটচালা মন্দির সম্পর্কে বেশ কিছু লোককথা কথিত আছে।

শোনা যায়, বহুকাল আগে এই মন্দিরের একজন পুরোহিত রাত্রিবেলা পুজো শেষ করে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। পরদিন সকালে এসে মন্দিরের দরজা খুলতেই তিনি দেখেন মন্দির শূন্য। শিবলিঙ্গ সেখানে নেই। বহু খোঁজার পর সেই শিবলিঙ্গকে তারা পাশে অবস্থিত গঙ্গা নদীর তীরে খুঁজে পান এবং তাঁকে আবার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবে শিবলিঙ্গ যাতে ঘুরে বেড়াতে না পারেন সেটি বন্ধ করার জন্যই এই মোটা শিবকে পরবর্তীতে শিকল দিয়ে আবদ্ধ করা হয়। তবে কেউ কেউ আবার মনে করেন তখন কংক্রিট ছিল না বলে মাটির বেদির উপরে এই শিবলিঙ্গ রাখা হত। গঙ্গা মন্দিরের খুব কাজ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় জোয়ারের জল এই মন্দিরে প্রবেশ করে শিবলিঙ্গকে নড়িয়ে তার স্থানচ্যূত করত। ফলে, শিবলিঙ্গ যাতে আবার নড়ে না যায় সেই জন্য শিবলিঙ্গকে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও অনেকেই মনে করেন।

মন্দিরে প্রবেশের সময়:-
প্রতিদিন ভোর ৪.৩০ থেকে দুপুর ১২.০০ অবধি মন্দির খোলা থাকে। আবার বিকেল ৪.০০ থেকে মন্দির পুনরায় খোলা হয়। দিনের বেলা ভক্তদের জন্য মন্দিরে প্রবেশ এবং পুজো দেওয়ার কোনো বাধা-নিষেধ নেই।

বিশেষ আকর্ষণ:-
• বিকালবেলার সন্ধ্যা আরতি।

• মহাদেবের ফুলের রাজবেশ।

গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রাপথ:-
• হাওড়া স্টেশন থেকে ফেরিলঞ্চে আহিরীটোলা পৌঁছে সেখান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটা পথে এই মন্দিরে পৌঁছনো যায়।

• কলকাতা থেকে চক্ররেলে শোভাবাজার আহিরীটোলা পৌঁছনো যায়। এরপর সেখান থেকে হেঁটে এই মন্দিরে যাওয়া যায়।

• অথবা, মেট্রোরেল করে শোভাবাজার সুতানটি স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে নিমতলা পৌঁছনোর অটো ধরতে হয়। আবার বিধাননগর থেকে নিমতলা যাওয়ার অটো করে এই মন্দিরে আসা যায়।

#কলকাতা #দুর্গেশ্বর_শিবমন্দির #মা_আনন্দময়ী_কালীমন্দির #নিমতলা #বাড়ির_পাশেই #বুড়ো_শিবতলা

Loading comments...